বাংলাদেশে উৎপন্ন অল্পসংখ্যক উৎকৃষ্ট জাতের আমের মধ্যে খিরসাপাতের স্থান শীর্ষে। ল্যাংড়া, খিরসাপাত ও গোপালভোগ—এই তিনটি আমের জাতকে আমভক্ত বাঙালি গুণ-মানের বিচারে শীর্ষে রেখেছেন। আসলে কোন আমটি শ্রেষ্ঠ এর বিচার হয়নি । অনেকে মনে করেন হবেও না কোনো দিন। কারণ এই তিনটি আমের ভক্তের দল প্রায় সমান তিনটি দলে বিভক্ত। কাজেই অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে সর্বশ্রেষ্ঠ আম নির্বাচনের প্রতিযোগিতা কিন্তু ফলাফল আসবে না কোনও দিন।
খিরসাপাত আম আশু জাতের যা জুন মাসের শুরু থেকেই পরিপক্বতা লাভ করে বাজারে আসতে থাকে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত খিরসাপাত বাজারে পাওয়া যায়।
* তবে জুন মাসের ৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত খিরসাপাত আমের আসল সময়। আমটির আকৃতি মাঝারি। দেখতে অনেকটা গোলাকার। একেকটির ওজন গড়ে ২৬৩ গ্রাম। ক্ষীরশাপাতি আমের বোঁটা বেশ মোটা এবং শক্ত। ত্বক মসৃণ, পাকলে ঊর্ধ্বাংশ অর্থাৎ বোঁটার আশপাশে হলুদ রং ধারণ করে। আমের মধ্যাংশ থেকে নিম্নাংশ হালকা সবুজ।
ক্ষীরশাপাতি সাধারণত গড়ে ৮ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে। ফলটির প্রস্থ ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। ক্ষীরশাপাতির খোসা সামান্য মোটা। আঁশবিহীন আমটির শাঁস হলুদাভ। ফলটি সুগন্ধযুক্ত, রসাল ও অত্যন্ত মিষ্টি স্বাদের। এর খাবার উপযোগী অংশ শতকরা ৬৭ দশমিক ২ ভাগ। খোসা ছাড়িয়ে নিলে এমনিতেই শাঁস আঁটি থেকে বেরিয়ে আসে। অনেক জাতের উচ্চমানের আম রয়েছে, যেগুলো গাছপাকা অবস্থায় খেলে টকের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ রয়ে যায়। এগুলো গাছপাকা অবস্থায় গাছ থেকে নামিয়ে অন্তত তিন থেকে চার দিন ঘরে রাখার পর মিষ্টতা আসে। এ-জাতীয় আম হচ্ছে মল্লিকা, মোহনভোগ, আশ্বিনা, বৃন্দাবনি ইত্যাদি। ক্ষীরশাপাতি পাকা অবস্থায় গাছ থেকে নামিয়ে কেটে ফালি করে খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। ক্ষীরশাপাতির মিষ্টতার পরিমাণ ১৯ শতাংশ। গাছ থেকে সংগ্রহের পর আমটি ছয় থেকে আট দিন পর্যন্ত ঘরে রাখা যায়। এই ফলের আঁটি পাতলা।
ক্ষীরশাপাতির ফলন খুব ভালো। তবে জাতটি অনিয়মিত। প্রতিবছরেই ফল আসবে না। যে বছর গাছে ফল আসবে, পরিমাণে অল্প আসবে না। গাছে ফল দিয়ে ভরে যাবে। আমটি অত্যন্ত বাণিজ্যসফল। নবাবগঞ্জ জেলার সর্বত্র, বিশেষ করে শিবগঞ্জ উপজেলায় সর্বাধিক ক্ষীরশাপাতি আমের চাষ হয়ে থাকে। এখানকার বাগানে উৎপাদিত ক্ষীরশাপাতি গুণে ও মানে সর্বোৎকৃষ্ট। নবাবগঞ্জ ব্যতীত রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ, পাবনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ক্ষীরশাপাতি আমের আবাদ হয়ে থাকে। তবে নবাবগঞ্জের পরেই ক্ষীরশাপাতি উৎপাদনে রাজশাহীর স্থান অগ্রগণ্য। ক্ষীরশাপাতির আরেকটি জাত রয়েছে ক্ষুদিক্ষীরশা নামের। এই আম আসল ক্ষীরশাপাতির চেয়ে ওজনে সামান্য কম। স্বাদ একই রকমের। ক্ষুদিক্ষীরশার রং কালচে সবুজ। আসল ক্ষীরশাপাতি হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। উভয় জাতের মূল্য ও মান একই পর্যায়ের। ক্ষুদিক্ষীরশা নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি।
ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল—এসব জেলায় হিমসাগর নামের জাতটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। হিমসাগর ও ক্ষীরশাপাতির স্বাদ প্রায় একই রকমের। দেখতেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় না। তবে হিমসাগরের উৎপাদন অত্যন্ত কম হওয়ায় খুচরা বিক্রেতারা ক্ষীরশাপাতি আমকে হিমসাগর বলেই বিক্রি করছেন উল্লিখিত জেলাগুলোর শহর ও বাজারে। ক্রেতাসাধারণ সানন্দে ক্ষীরশাপাতি আম কিনছেন হিমসাগর মনে করে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ক্ষীরশাপাতি একান্তই বাংলাদেশের আম। ধারণা করা হয়, মুর্শিদাবাদের নবাবদের বাগান থেকে প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিল ক্ষীরশাপাতি। মুকুল আসার পর মোট চার মাস সময় নেয় আমটি পোক্ত হতে। আমটি চেনার সহজ উপায় হচ্ছে এটি দেখতে অনেকটা গোলাকার, বোঁটা বেশ মোটা। পৃষ্ঠদেশের কাঁধের চেয়ে সম্মুখে কাঁধ অপেক্ষাকৃত স্ফীত। ফলটির অবতল বা সাইনাস এবং ঠোঁট নেই বললেই চলে। শীর্ষদেশ গোলাকৃতির।
কনটেন্ট/প্রথম আলো
বিভিন্ন জাতের আমের নাম:
পৃথিবীতে আমের প্রায় কয়েকশ জাত রয়েছে।১. ফজলি,
২. ল্যাংড়া,
৩. গোপালভোগ,
৪. খিরসাপাত,
৫.অরুনা,
৬.আম্রপালি,
৭.মল্লিকা,
৮.সুবর্নরেখা,
৯.মিশ্রিদানা,
১০.নিলাম্বরী,
১১.কালীভোগ,
১২.কাঁচামিঠা,
১৩.আলফানসো,
১৪.বারোমাসি,
১৫.তোতাপুরী,
১৬.কারাবাউ,
১৭.গোপাল খাস,
১৮.কেন্ট,
১৯.সূর্যপূরী,
২০.পাহুতান,
২১. ত্রিফলা,
২২. হাড়িভাঙ্গা,
২৩. ছাতাপরা,
২৪. গুঠলি,
২৫.লখনা,
২৬.আদাইরা,
২৭.কলাবতী ইত্যাদি