চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী || চাঁপাই পোস্ট

আজ ১৭ জুলাই ২০২১।
এক বছর আগে এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারনে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে  শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন উপমহাদেশের প্রথিতযশা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, লেখক, শিক্ষাবিদ, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী– প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ।

প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন মালদহ (বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ)  জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরকাল তিনি তাঁর পরিবারের লোকেদের সাথেই কাটান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ‘গোহাল বাড়ি’ এলাকায় পরিবারসহ দীর্ঘদিন ছিলেন। শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ৫২  পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা হিসেবে কারাবরণ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক নব্বই দশকের সর্বাপেক্ষা ‘প্রশংসিত বাঙালি ব্যক্তিত’ ছিলেন প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য এবং উপাচার্য হিসেবে দীর্ঘদিন সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১ নভেম্বর ১৯৯২ থেকে ৩১ আগস্ট ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ তম উপাচার্য ছিলেন। 
এর আগে অবশ্য রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসাবে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি পরে কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন।

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন-ব্যবস্থা, বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করে চলেছেন। এসব ক্ষেত্রে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও প্রখ্যাত। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। দেশ বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কথা(১৯৬৬), মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা (১৯৪৫) তুলানামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ (১৯৮২), বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট (১৯৯২), সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৩), গণতন্ত্রের ভবিষৎ ( ১৯৯৪), শান্তি চুক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৯৮) আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা (১৯৯৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০০)। এছাড়াও ইংরেজিতে অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন প্রফেসর ড.এমাজউদ্দিন আহমদ।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান এবং সৃজনশীল লেখার জন্যে তিনি দেশ ও বিদেশে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন। সৃষ্টিশীল গবেষণা ও আলেখ্য রচনার জন্য ‘মহাকাল কৃষ্টি চিন্তা সংঘ স্বর্ণপদক’, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, জিয়া সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক অর্জন করেন দেশবরেণ্য গবেষক ও পর্যালোচক- প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ।
শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৯২ সালে ‘একুশে পদক’, মাইকেল মধুসুদন দত্ত গোল্ড মডেল, শেরে বাংলা স্মৃতি স্বর্ণপদক, ঢাকা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ যুব ফ্রন্ট গোল্ড মেডেল, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড.এমাজউদ্দিন আহমদ।

এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং দলটির নীতি-নির্ধারণে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল বলে ধারণা করা হতো।


বিভিন্ন মতাদর্শ, ব্যক্তি এবং চিন্তাধারার সমালোচনা করলেও এমাজউদ্দীন আহমদের শেষ পর্যন্ত সবাইকে একত্রিত করার চেস্টা করতেন। "বাংলাদেশের উন্নয়ন ও টেকসই গণতন্ত্রের জন্য তিনি আমৃত্যু কথা বলে গেছেন।" বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ একটি দলের সাথে যুক্ত থাকলেও অন্যান্য রাজনৈতিক মতাদর্শের কাছেও এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল।

একটি আদর্শের প্রতি সমর্থন থাকলেও পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন না তিনি। সবার চিন্তাধারা, যুক্তি নিয়ে সমন্বয় করে সামগ্রিক উন্নয়নের প্রয়াস ছিল তার মধ্যে।
-
১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রখ্যাত এই ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে আমাদের ক্ষুদ্র আয়োজন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post