চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রাজারামপুর এলাকার মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মৌসুমি। মাত্র ২০০ টাকায় উদ্যোক্তা জীবন শুরু করে লাখপতি সেলার হয়েছেন তিনি।
আজকে চাঁপাই পোস্টের উদ্যোক্তা গল্পের আয়োজন আয়েশা সিদ্দিকা মৌসুমির উদ্যোগ নিয়ে।
উদ্যোক্তা হবার কোনো রকম পূর্বপরিকল্পনা না থাকলেও হঠাৎ করে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করে দেন তিনি।
শুরু করার পেছনে প্রধান কারণ মহামারী করোনার থাবা বলে জানান। এর আগে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে চাকরি করতেন কিন্তু লকডাউনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরিটাও সে সময় বন্ধ হয়ে যায়। স্বাবলম্বী হিসেবে নিজের খরচ নিজে চালানোর জন্য শখ, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ছবি মোমবাতি নিয়ে কাজ শুরু করেন ।
ফেসবুকে উদ্যোক্তাদের বিচরণ বিভিন্ন বিজনেস ও উদ্যোক্তা গ্রুপে। এফ কমার্সের বদৌলতে বিভিন্ন গ্রুপে মৌসুমিও পরিচিতি পোস্ট দেওয়া শুরু করেন, সাথে নিজের তৈরি ছবি মোমবাতির ছবি।
প্রথম অর্ডার আসে নারীভিত্তিক উদ্যোক্তা গ্রুপ উইমেন এন্ড ই-কমার্স তথা উই থেকে। এরপরে অন্য বিভিন্ন গ্রুপে নিজের পণ্যের পোস্ট দিতে থাকেন আর অর্ডার গ্রহণ করে ডেলিভারি শুরু করেন।
পারিবারিক সাপোর্ট হিসেবে মা ও বোনের সাপোর্ট পেলেও বাবার সাপোর্ট পাননি তিনি। বাবার ভয়ে ছবি মোমবাতি প্রস্তুত করতে রাত জেগে কাজ করতেন যেন বাবা সেরকম কিছু না বলেন।
মৌসুমির পরিশ্রম ও স্পৃহায় নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশের সকল জেলায় পৌঁছেছে ছবি মোমবাতি। পণ্যের কারনে অনেকে তাকে মোম আপু নাম দিয়ে ডাকা শুরু করেন।
ছবি মোমবাতির সফলতার কারনে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। পর্যায়ক্রমে তিনি তার উদ্যোগে যুক্ত করেন- ছবি মগ প্রিন্ট, শাড়ি, হোমমেড পটেটো চিপস, পপকর্ন দানা, বিভিন্ন গিফট আইটেম, নকশী পিঠা, হোমমেড ট্যাং । এর সাথে যুক্ত করেন অর্গানিক হেয়ার অয়েল যা বর্তমানে মৌসুমির কাছে হটকেক।
তিনি জানান, অর্গানিক হেয়ার অয়েল চুল পরা বন্ধ করে নতুন চুল গজায়, এই পণ্য সবচেয়ে বেশি সাঁড়া ফেলেছে এবং বছর পূরণ না হতেই এক লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন তিনি।
বিজনেসের প্রসারে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন অব বিজনেস (ক্যাব) এবং উইমেন এন্ড ই-কমার্স (উই) এর ক্রেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
বিজনেসে তিনি যে সবসময় ভালো অভিজ্ঞতার মাঝে তা কিন্তু নয়, খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন কয়েকবার। বিভিন্ন বিড়ম্বনা, কাস্টমার পণ্য রিসিভ না করা, সেটি ফিরে আসা, লস টানাসহ বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পার করে এ পর্যায়ে পৌঁছেছেন তিনি। এত কিছুর পরেও তিনি বিজনেস থেকে পিছুপা হননি। ভুল থেকে শিখেছেন অনেক।
তিনি মনে করেন,ব্যবসা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই সৎ ভাবে সততার সাথে পণ্য কোয়ালিটি ১০০% ঠিক রেখে কাজ করতে হবে এবং নিজেকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে । মন দিয়ে ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে নিজের প্রতি ভরসা রেখে কাজ করেছি বলেই সফলভাবে লাখ টাকার সেল করতে পেরেছি বলে যুক্ত করেন মৌসুমি।
নিজেকে ১০ বছর পর কোথায় দেখতে চান জানতে চাইলে জানান তিনি তার উদ্যোগের ব্যাপক প্রসার চান এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব ঘোচাতে চান। বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থান করতে অনেক আগ্রহ রয়েছে বলে জানান।
বেকার জীবন লজ্জার, বেকার জীবন কষ্টের, বেকার জীবন সুখহীন, বেকার জীবন অভিশাপের। তাই তিনি তরুণদের বসে না থেকে দক্ষতা অর্জন করে যেকোন কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন। মৌসুমি বিশ্বাস করেন ভয়কে জয় করে কাজ শুরু করা সঠিক সময় হলো এখনই। উদ্যোগ নিয়ে লেগে থেকে সফল হলে নিজে সুখী থাকা যাবে আর পরিবারের সবার সাথে হাসিখুশি থাকা যাবে।