অপেক্ষা - ইয়াসমিন রিমা || ছোট গল্প || চাঁপাই পোস্ট

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীরটা নিয়ে টিপ টিপ করে জ্বলে থাকা শোলতের আলোর কাছে এলো মায়া।হাতে পরিবারের সবার একসাথে তোলা ছবির বাঁধাই করা একটা ফ্রেম।ছবিটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাবু তখন সবে ১০ বছরের ছেলে,আর বড় খুকি ৮ বছরের এবং ছোট খুকির বয়স মাত্র ৮ মাস। হুট করে কবির বাড়িতে ফটো তোলার লোকটাকে বাড়িতে ডেকে আনে।আর মায়াকে বলে আসমানী রঙের শাড়িটা পড়তে। সে দিন খুব লজ্জা পেয়েছিলো মায়া তবুও স্বামীর কথায় ঠিক আসমানী শাড়িখানা পড়ে আর লম্বা চুলটা বিনুনি করে ডান দিক দিয়ে সামনে এনে কবিরের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে ছোট খুকিকে নিয়ে।সেই সময় গুলে কতই না মধুর ছিলো।সেই সময় বাড়িটায় হৈচৈ হতো খুব।
মাঝে মাঝে জোৎস্নার আলোতে রাত দুপুরে মায়াকে নিয়ে সবার অগোচরে চলে যেতো গ্রাম ঘুরতে।কখনও কখনও ঘাটের নৌকা বাঁধা থাকলে বৈঠা চালিয়ে চলে যেতো দুজনে পদ্ম ফুল তুলতে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মায়ার জন্য লুকিয়ে তেঁতুল, আমড়ার আচার,বারো ভাজা,ঝুরি কিছু না কিছু আনতো।মায়া সেই সব পছন্দের জিনিস গুলো পেয়ে লজ্জাই আর আনন্দে হেসে কুটিকুটি হতো।আরও কত ছোট ছোট স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে মায়ার আজ। কবির বৌকে খুব ভালোবাসতো এটা কখনও মুখে বলেনি কিন্তু ঠিক প্রতিটা মুহূর্তে বুঝিয়ে দিতো।

হঠাৎ করে শুনা গেলো মুক্তি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দেশটা নাকি পাকিস্তানীরা নিজেদের করে নিবে।কিন্তু এই দেশের মানুষ তো কোন ভাবে এটা মেনে নিতে পারে না।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দিলেন স্বাধীনতার।আর দশ জনের মত কবিরও যোগ দিলেন মুক্তি যুদ্ধে। কবিরের মনেও তখন যুদ্ধে যাওয়ার নেশা। মায়া কবিরের যুদ্ধ যাওয়ার কথা শুনে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।তার বার বার মনে হতে লাগলো কবির যদি হারিয়ে যায়, সেই সুখের দিন গুলোর কথা ভাবছে,বাচ্চা গুলো কেমন করে মানুষ করবে তাই নিয়ে ব্যকুল।কবির মায়ার মনের কথা বুঝতে পেরে বলল, বৌ আর কেঁদো না।আমি আবার আসবো ফিরে,সাথে আনবো আমার বাংলা মায়ের স্বাধীনতা। সারা বাংলার সন্তানদের মুক্ত হয়ে বাঁচার অধিকার। 
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলো। দেশ স্বাধীন হলো।অনেকে বাড়ি ফিরলো আবার অনেকে দেশের জন্য দেশকে ভালেবেসে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করলো দেশের মাটিতে।আজ পর্যন্ত কবিরের কোন খবর পাওয়া যায় নি।এখনও মায়া আছে কবির বাড়ি ফিরবে এই অপেক্ষায়।

-------------------------------------------------

[আপনার লেখা কবিতা, গল্প, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, কলাম, মতামত পাঠান আমাদের কাছে write@chapaipost.com এই ঠিকানায়।]


1 Comments

  1. কবিরের মায়ের মতো হাজার মা আজও অপেক্ষায় করছে, তার খোঁকা একদিন বাড়ি ফিরবে।

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post